নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার কাজ শুরু হয় গত ২৯ মার্চ থেকে। সেই থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবক ও হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট বিভূতিভূষণ হালদার (৩০)। তিনি একাই আজ অব্দি করোনা সন্দেহসহ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। আর ওই দিন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ভয়কে জয় করে যিনি ইতোমধ্যে ২৭১ বার রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। আর সময়ের সাহসী সন্তান করোনাযোদ্ধা বিভূতিভূষণের এ কাজে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। টেকনোলজিস্ট বিভূতিভূষণের বীরত্বের জন্য তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
বিভূতিভূষণের কাজের প্রতি উৎসাহ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড এবং শুভেচ্ছা স্বরুপ রকমারি ফলের ঝুড়ি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের পক্ষ থেকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এই শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন সহকারী কমিশনার ও এনডিসি বরিশাল রবিন শীষ।
অপরদিকে বরিশাল মেডিকেল এবং স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিভূতি ভূষণকে ‘করোনা যুদ্ধের নায়ক’ হিসেবে অবহিত করেছেন। সেই করোনা যোদ্ধাকে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ নগদ পাঁচ হাজার টাকা, দুই সেট গ্লোভস, দুটি মাস্ক ও একটি পিপিই এবং দুই ঝুড়ি ফল উপহার দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। রোববার বিকেল পৌনে ৪টায় পুলিশ কমিশনারের পক্ষে সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল হালিম নগরীর সদর রোডে বিভূতির অস্থায়ী সরকারি বাসস্থান হোটেল স্যাডেনায় এ উপহার পৌঁছে দেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এই সময়ে তিনি যা করছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি ভালো কাজ করছেন। তিনি প্রথম সারির একজন যোদ্ধা। তাকে উৎসাহিত করতে সামান্য উপহার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়লোজি বিভাগে স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাব প্রস্তুত হওয়ার পর থেকে শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহের লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। হাসপাতালের অভিজ্ঞ সবাই এ কাজে অপরাগ প্রকাশ করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে যখন সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন ঠিক তখন স্বেচ্ছায় এ কাজের জন্য নিজেকে সমর্পণ করেন হাসপাতালের কনিষ্ঠ টেকনোলজিস্ট বিভূতি ভূষণ। শুরু থেকে আজ অবধি যিনি একাই জীবন বাজী রেখে করোনা রোগীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। একাই শেবাচিমের করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করছেন পরীক্ষার জন্য।
বিভূতি ভূষণ হালদার বলেন, যেকোনো পুরস্কার আনন্দের। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের পাঠানো পুরস্কার আমাকে উৎসাহিত করবে। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে করোনার বিস্তার রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
বিভূতি ভূষণ হালদার নয় বছর আগে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট পদে যোগ দেন। তিনি সদর উপজেলার চরকাউয়া এলাকার বাসিন্দা সুধাংশু হালদারের ছেলে। তার বাবা সুধাংশু হালদার মেডিকেলের সহকারী কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ছয় বছর আগে অবসর নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বিভূতি ভূষণ। এর মধ্যে ১৫জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ।
Leave a Reply